ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বলতে কি বুঝায়?

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি

বর্তমান প্রযুক্তির নির্ভির পৃথিবীতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) ভূমিকা অনেক। তাই আজ আমরা আলোচনা করবো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বলতে কি বুঝায়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এমন একটি টেকনোলজি যার মাধ্যমে ব্যাবহারকারী একটি ভার্চুয়াল জগৎ অনুভব করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ৩৬০-ডিগ্রি অভিজ্ঞতা পায়। যার মাধ্যমে তারা কোনো কিছু চোখের সামনে দেখতে পায়। নিজ কানে শুনতে পারে এবং এমনকি স্পর্শ করার অনুভূতি পাওয়া যায়। এই সব কিছু একসাথে দিতে পারে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা সংক্ষেপে (VR) প্রযুক্তি।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি?

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা সংক্ষেপে (VR) এখন কার প্রযুক্তি নির্ভর দুনিয়াকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন করা গুলোতে আরো আলাদা আমত্রা যোগ করে সক্ষম। সাধারণত VR হেডসেট, কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা গেমিং কনসোলের মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অভিজ্ঞতা নেওয়া যাচ্ছে। এই প্রযুক্তি মূলত বিনোদন, শিক্ষা, চিকিৎসা, গেমিং এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি ব্যাবহার করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে মানুষ নিদৃষ্ট একটি জায়গায় বসে অন্য কোনো জায়গার অনুভতি নিতে পারছে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বর্তমানে গেমিং মাধ্যমে সব চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কেননা গেমাররা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মাধ্যমে তারা নিদিষ্ট এটি জায়গায় বসে সবাই একসাথে হতে পারে। যেটা তাদের বাস্তব মতোই অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম। ঠিক একই ভাবে বিনোদন, শিক্ষা, চিকিৎসা সব ক্ষেত্রে এর ব্যাবহার অপরিসীম। যারা বলে থাকেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? তাদের জন্য একটি কোথায় বলতে পারি যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এমন একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে নিদৃষ্ট কোনো জায়গায় অবস্থিত না থেকে তার অনুভতি নেওয়া যায়।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মূল উপাদানসমূহ।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কাজ করার প্রক্রিয়া খুবই জটিল এবং আধুনিক প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে এই তৈরি করা। তাই এটি সঠিক ভাবে কাজ করতে বেশ কিছু উপাদানের পয়জন হয় নিচে তুলে ধরা হলো। এর মাধ্যমে আপনাদর জানতে পারবেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মূল গুলো।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মূল উপাদানসমূহ।

হেড-মাউন্টেড ডিসপ্লে (HMD)

এই ডিভাইসটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মূল অংশ হিসেবে কাজ করে। এটি ব্যবহারকারীর চোখের সামনে একটি স্ক্রিন তৈরী করে যা আলাদা দুটি চিত্র প্রদর্শন করে। যেটা প্রতিটি চোখের জন্য স্ক্রিনটি কে আলাদা করে রাখে। যার ফলে মস্তিষ্ক সেই দুটি চিত্রকে একত্রিত করে এবং একটি ত্রিমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।

ভিজ্যুয়াল ইমার্শন (Visual Immersion):

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ব্যবহারকারী একটি কৃত্রিম জগতে প্রবেশ করার অনুভতি। ব্যাবহারকারী ৩৬০ ডিগ্রি চারপাশের পরিবেশ দেখতে পারেন। যার ফলে ব্যবহারকারী মনে করেন যে সে আসল জগতে উপস্থিত আছেন। এটাই হলো ভিজ্যুয়াল ইমার্শন (Visual Immersion)।

ইন্টারঅ্যাকটিভিটি (Interactivity):

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ব্যবহারকারী সেই পরিবেশের সাথে সরাসরি ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারেন। আরো বেশি ইন্টারঅ্যাকটিভিটি হওয়ার জন্য হ্যান্ড কন্ট্রোলার, গ্লাভস বা বিশেষ সেন্সর ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। যা ব্যাবহারকারীদের কৃত্রিম জগতের বস্তু বা চরিত্রের সাথে বিভিন্ন ক্রিয়া সম্পাদন করার সুযোগ দেয়। আর একেই ইন্টারঅ্যাকটিভিটি (Interactivity) বলা হয়।

থ্রিডি সাউন্ড (3D Sound):

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বা VR অভিজ্ঞতা আরও বাস্তবসম্মত করতে থ্রিডি সাউন্ড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন দিক থেকে আসা শব্দ শুনতে পারেন। যা আমাদের ভার্চুয়াল জগতের অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করে তোলে।

সেন্সরি ফিডব্যাক (Sensory Feedback):

এখনার উন্নত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা VR সিস্টেম ব্যবহারকারীর স্পর্শ, গতি এবং অনুভূতির উপরও কাজ করে। যা ব্যবহারকারীকে আরো বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতা দেয়। এর মধ্যে হ্যাপটিক প্রযুক্তি এর একটি উদাহরণ যা ব্যবহারকারীকে কৃত্রিম বস্তু স্পর্শ করার অনুভূতি প্রদান করে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রকারভেদ গুলো কি কি?

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রকারভেদ বিভিন্ন প্রকার তাদের মধ্যে উল্লখযোগ্য হলো তিনটি। আপনারা জেনেই থাকবেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? তাই এখন এর প্রকারভেদ গুলো তুলে ধরা হলো।

নন-ইমারসিভ VR (Non-Immersive VR):

নন-ইমারসিভ VR হলো সেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যেখানে ব্যবহারকারী সম্পূর্ণরূপে ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করতে পারে না। তারা শুধু মাত্র কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের পর্দায় কৃত্রিম পরিবেশ দেখে। সাধারণত তারা এর মাধ্যমে সাধারণ যে গেম এবং সফটওয়্যারে রয়েছে সেগুলো ব্যাবহার করতে পরে।

সেমি-ইমারসিভ VR (Semi-Immersive VR):

এই ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সিস্টেম ব্যবহারকারীকে কিছুটা ভার্চুয়াল পরিবেশে দিতে সক্ষম থাকে। কিন্তু তারা আসল পৃথিবীর পৰিৱেশ সেটা সম্পুন্ন ভাবে দিতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, কিছু সিমুলেটর VR সিসটেম রয়েছে যেখানে ব্যবহারকারী কৃত্রিম জগতের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। কিন্তু সেই জগৎটি বাস্তব পরিবেশের সাথে মিলে না। এটাই হলো সেমি-ইমারসিভ VR (Semi-Immersive VR)।

সম্পূর্ণ ইমারসিভ VR (Fully Immersive VR):

এই ধরণের ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বা VR সিস্টেম ব্যবহারকারীকে সম্পূর্ণভাবে একটি কৃত্রিম জগত উপস্থাপন করে। যেখেনে ব্যবহারকারীরা দেখতে, শুনতে এবং অনুভব করতে পারেন। এই প্রযুক্তি সব থেকে উন্নত এবং এর মাধ্যমে সব উন্নত কাজ গুলো করা হয়। এর মাধ্যমে উন্নত গেমিং, প্রশিক্ষণ এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়।

আশাকরি আপনারা বুজতে পেরেছেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? এবং এর প্রকারভেদ গুলো। আমরা সব চেয়ে সহজ ভাবে আপনাদের মাঝে তুলি ধরেছি।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার ক্ষেত্র সমূহ।

এখনকার সময় প্রায় সব ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যাবহার রয়েছে। সবচেয়ে জটিল কাজ গুলো এর মাধ্যম সম্পাদন করা হয়। কোনো ব্যাক্তি বাস্তব অবস্থায় থেকেও একটি অন্য রখম সাধ নিতে পারে। নিচে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ক্ষেত্র গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার ক্ষেত্র সমূহ।

গেমিং (Gaming):

বর্তমান সময়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেমিং জগতে একটি বিপ্লব এনেছে। যার মাধ্যমে গেমার রা সেই গেমের কৃত্রিম পরিবেশে নিজেই চরিত্র যে তুলে ধরতে পারে। অন্যান গেমাররা সহ তারা সময় একসাথে হয়ে একটি কৃত্রিম গ্রপ তৈরী করতে পারে। যা তাদের গেমিং অভিজ্ঞতাকে আরও উপভোগ্য করে তুলে। এই VR গেমিংয়ের জন্য বিশেষ ধরনের হেডসেট এবং কন্ট্রোলারের প্রয়োজন পড়ে। যা ব্যাবহার করার ফলে ব্যবহারকারীকে বাস্তবের মতো একটি ভার্চুয়াল জগতে অভিজ্ঞতা দিতে পারে।

শিক্ষা (Education):

শিক্ষাক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যাবহার অপরিসীম। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারে শিক্ষাথীরা একটি কৃত্রিম জগতে প্রবেশ করে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে শিখতে পারে। যেমনঃ ইতিহাসের বিভিন্ন সময়কালের ভার্চুয়াল ভ্রমণ করা, বিজ্ঞানের বিভিন্ন পরীক্ষা, ভ্রমণ করা ইত্যাদি। এই প্রযুক্তি শিক্ষার মান উন্নয়ন করে এবং শিক্ষার্থীদের শিখতে আগ্রহী করে তোলে।

চিকিৎসা (Medical):

বর্তমান সময় চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা VR ব্যাপকভাবে জনপ্রয়। চিকিৎসকরা জটিল কোন সার্জারি করার আগে ভার্চুয়াল মডেলে সেটা অনুশীলন করতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসায় VR মাধ্যমে রোগীদের থেরাপি দেওয়া হয়।

স্থাপত্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং (Architecture and Engineering):

বিভিন্ন স্থাপত্য ও ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে প্রকল্পের ডিজাইন পরীক্ষা করা হয়। ইঞ্জিনিয়াররা ভার্চুয়াল মডেলের মাধ্যমে ভবিষ্যতের স্থাপনা কেমন হবে তা দেখতে পারেন। যদি কোথাও কোনো ভুল মনে হয় তখন সেটা সংশোধন করতে পারেন।

প্রশিক্ষণ (Training):

বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি মাধ্যম। যেমন: সামরিক, মহাকাশ, শিল্প এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য VR মাধ্যমে নিরাপদে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যাবহারের আরো অনেক গুলো মাধ্যম রয়েছে। আশাকরি আপনারা বুজতে পেরেছেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? এবং এর ব্যাবহার সমূহ।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ভবিষ্যৎ কি?

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বা VR সিস্টেমর ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের ভবিষতের কল্পনা গুলো বাস্তব রূপ পেয়েছে। যেটা মানব জাতী আগে কখনো চিন্তাও করে পারেনি। এই প্রযুক্তি উন্নতি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) এর সাথে মিলে আরো উন্নত হবে। যেটা আরো অনেক ব্যাবহার উপযুগি হবে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি শিক্ষা, বিনোদন, চিকিৎসা এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে বিপ্লব নিয়ে আসবে।

তবে আমরা জানি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বা VR সিস্টেমর অনেক ব্যায়বহুল। আমার সাধারণ মানুষ এই সব সময় ব্যাবহার করতে পারিনা। তবে এখন এর ধাম কমতে শুরু করেছে। খুব শিগ্রই VR সিস্টেমর দাম অনেক কমে যাবে। কারণ অনক বড়ো বড়ো কোম্পনি গুলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বা VR সিস্টেমে ইনভেস্ট করেছে। আশাকরি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ভবিষ্যৎ সবকিছু তুলে ধরতে পেরেছি।

কিছু জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

আপনারা আমাদের প্রায় যে প্রশ্ন গুলো করে থাকেন সেই প্রশ্ন গুলো এবং উত্তর সমূহ।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কী?

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি একটি প্রযুক্তি, যা ব্যবহারকারীদের কটি কৃত্রিম ত্রিমাত্রিক জগতে প্রবেশ করতে দেয়। যেখানে তিনি বাস্তব অবস্থার মতো সবকিছু অনুভব করতে পারেন।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কীভাবে ব্যবহার করা হয়?

VR ব্যবহার করতে হলে বিশেষভাবে তৈরি হেডসেট প্রয়োজন হবে। (যেমন: Oculus Rift, HTC Vive) ও মোশন সেন্সর যুক্ত গুলোর প্রয়োজন পরে। এ ডিভাইস গুলো ব্যাবহারে মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ভার্চুয়াল জগতে চলাফেরা এবং বিভিন্ন কাজ করতে পারে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে কি বাস্তব জগতের অনুভূতি পাওয়া যায়?

হ্যাঁ, আপনি এখনকার উন্নত ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে বাস্তব জগতের অনুভূতি পেতে পারেন।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কী?

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বা VR সিস্টেমর ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি শিক্ষা, বিনোদন, চিকিৎসা এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে বিপ্লব নিয়ে আসবে।

আরো কিছু প্রয়োজনীয় পোস্ট সমূহ:

ক্লাউড কম্পিউটিং কী? ক্লাউড কম্পিউটিং বলতে কি বুঝায়? সবকিছু এক সাথে।

NID নাম্বার দিয়ে আইডি কার্ড বের করার নিয়ম।

শেয়ার করুন।